top of page
Search

কাজীর মর্যাদা

Writer's picture: History and TalesHistory and Tales

কাজী মুহাম্মদ শরাফ ছিলেন বাংলা প্রশাসনের কাজী বা বিচারক। অষ্টাদশ শতকের গোড়ার দিকে তখন আজিমুশ্বান (৬ষ্ঠ মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব এর পৌত্র) বাংলার সুবেদার ছিলেন। এ সময়ে বিচারালয়ের প্রধান বিচারক কাজী পদবি ধারণ করতেন। বিচার সংক্রান্ত কার্যাবলির বাহিরেও কাজীকে আরো অনেক কাজে দায়িত্ব পালন করতে হতো। যেমন, ধর্মীয় শিক্ষা বিস্তার ও হিতৈষিতা, শাসনে সমর্থন অথবা অস্বীকৃতি জানানো, দলিলগত কাজের সম্পাদনা, সাক্ষ্য-প্রমাণের শুনানি, এতিমের অভিভাবকত্ব এবং আরো অনেক সামাজিক দায়িত্ব। কাজী হতে হলে একজনকে হতে হবে মুসলিম, প্রাপ্তবয়স্ক, শরীয়া শিক্ষায় শিক্ষিত। সম্রাট অথবা উচ্চ পদস্ত শাসকগণদের দ্বারা বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে। সাধারণত সম্রাট নিজেই এদের বিভিন্ন প্রশাসনে বিচারের দায়িত্বে নিয়োগ করতেন। কাজীরা সুবেদার কিংবা দিওয়ান এর তুলনায় কোন ক্ষেত্রে কম মর্যাদার অধিকারি ছিলেন না।

একদিন সোনামুখীর জমিদার বৃন্দাবন তালুকদারের কাছে একজন ভিক্ষুক এসে ভিক্ষে চাইলো। বৃন্দাবন তার প্রতি বিরক্ত হয়ে তাকে বিদায় করলেন ভিক্ষে না দিয়ে। কিন্তু সেই ভিক্ষুক বাড়ি থেকে বেরিয়ে পথে কতগুলো ইট সংগ্রহ করে বৃন্দাবন তালুকদারের বাড়ির প্রবেশ পথের উপর ইট গুলো একটি অপরটির উপর রেখে ছোট একটি দেয়ালের আকৃতি দেয়। তারপর সেটিকে একটি মসজিদ ঘোষণা করে আজান দিতে আরম্ভ করে। খবর পেয়ে ছুটে আসেন বৃন্দাবন তালুকদার। পরিস্থিতি দেখে তিনি খুব ক্ষিপ্ত হয়ে ভিক্ষুককে তাড়িয়ে দিলেন এবং দেয়ালটি ভেঙে দিলেন। ভিক্ষুক সেখান থেকে গিয়ে নবাব জাফর খান (বাংলার দিওয়ান, মুর্শিদ-কুলি-খান নামে অধিক প্রসিদ্ধ) এর আদালতে বৃন্দাবন তালুকদারের বিরুদ্ধে মসজিদ ভঙ্গের মামলা করে দিলেন।

কাজী মুহাম্মদ শরাফ ছিলেন আদালতের কাজী। নালিশ সকল শুনে অন্য উলেমার সাথে আলোচনার পর তিনি বৃন্দাবনকে জীবনদন্ডে দন্ডিত করলেন। এটা ছিল বৃন্দাবনের জীবনদন্ডের আদেশ যে কিনা সেই ভিক্ষককে ভিক্ষে দিতে রাজি হননি, এবং তার বানানো ইটের তৈরী দেয়াল ভেঙে দিয়েছিলেন যেটা সে মসজিদ বলে ঘোষণা করেছিল। কিন্তু যাই হোক না কেন, কাজীর আদেশ মানেই চূড়ান্ত বিচার।

কিন্তু জাফর খান বিষয়টা মেনে নিতে পারেনি। তিনি কাজীকে অনুরোধ করলেন যে কোন ভাবে বৃন্দাবনকে কি জীবনদন্ড থেকে ছাড় দেয়া সম্ভব কিনা। জবাবে কাজী জানালেন, বৃন্দাবনের শাস্তি বাস্তবায়নের পূর্বে মধ্যস্থতাকারীদের জন্য কিছু সময় দেয়া যেতে পারে শুধু। কিন্তু তারপর তার শাস্তি বাস্তবায়ন করা হবে। শুধু জাফর খানই নয়, সুবেদার আজিমুশ্বানও কাজীকে অনুরোধ করে একই উত্তর পেলেন। ফলে আজিমুশ্বান এবং জাফর খান উভয়ই সম্রাট আওরঙ্গজেবকে লিখে পুরো বিষয় জানিয়ে তার হস্তক্ষেপের অনুরোধ করলেন। একমাত্র সম্রাট নিজেই পারেন এই শাস্তি থেকে তাকে রক্ষা করতে। কিন্তু দুজনকেই অবাক করে সম্রাট তার জবাবে জানালেন, কাজী ঈশ্বরের পাশে আছেন।

বৃন্দাবনকে জীবনদন্ড পেতেই হয় শেষ পর্যন্ত এবং কেউ তাকে বাঁচাতে সক্ষম হয়নি। একজন কাজীর প্রভাব এতটাই ছিল সে সময় যে দিওয়ান, সুবেদার এমনকি সম্রাট নিজেও তার রায়কে পরিবর্তণ করতে পারেনি। তবে একটা বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন যে সে সময় বিচারকার্যে কোন প্রকার বৈষম্যতা ছিল না। হিন্দু-মুসলিম, ধনী-দরিদ্র সকলেই ছিলেন ন্যায়বিচারের দৃষ্টিতে সমান। জাফর খানের আদালত পক্ষপাতদুষ্ট ছিল না মোটেই। এবং কাজীর রায় ছিল সব ধরণের মধ্যস্থতা বর্জিত। তার অবস্থান ছিল একজন সর্বোচ্চ ক্ষমতাধারীর আসনে।

16 views0 comments

Recent Posts

See All

Commentaires


bottom of page